মাতৃভাষায় এই প্রথম কোনো ব্লগ-পোস্ট লিখছি। না, শুধু ব্লগ-পোস্ট লিখছি বললে ভুল বলা হবে। মাতৃভাষায় এই প্রথম কিছু লিখছি, অনেক অনেক দিন পর। লাস্ট সেই ২০০৫। মাস টা এপ্রিল বোধহয়। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। তার পরে তো কলেজ-এ উঠে সাপের পাঁচ-পা দেখে বাংলার বদলে ওই কিসব অল্টারনেটিভ ইংলিশ নিলাম। কি খুশি-ই না হয়েছিলাম সেদিন। বাংলা থেকে মুক্তি, সারাজীবনের মতো!
বাংলা-র সাথে বরাবর এর শত্রূতা আমার। স্কুল এর পরীক্ষায় কোনদিন ৫০ এ ২০-র ওপর পেয়েছি বলে মনে পরে না। ক্লাস টেস্ট এ অচেনা রচনা লিখতে দিলে ১০ লাইন এর বেশি লিখতে পারতাম না। ব্যাকরণ এর উত্তর পাশের জনের খাতায় খোঁজার চেষ্টা করতাম। Parents-teachers মিটিং গুলোতে টিচার দের বরাবর একটাই অভিযোগ থাকতো- বাংলা তে আরও ইম্প্রোভমেণ্ট দরকার। প্রথম প্রথম মা বলতো, বাঙালির মেয়ে হয়ে বাংলায় এত খারাপ! পরের দিকে, নিজের মুখ বাঁচাতে মেয়ে কে তোতা পাখি করে পরীক্ষায় পাঠাতো। রচনা থেকে শুরু করে ব্যাকরণ, গদ্য-র প্রশ্ন উত্তর থেকে পদ্য, কোনো কিছুই বাদ থাকত না মেয়ে কে দিয়ে মুখস্ত করাতে। স্বাভাবিক ভাবেই, মাধ্যমিক পরীক্ষায় মা এর মুখ উজ্জ্বল করে লেটার-মার্কস এনেছিল মেয়ে।
"বোর্ড এর পরীক্ষায় এত নম্বর পেয়েছি যখন, তাহলে হয়তো বাংলা তে এতটাও খারাপ না আমি"। এই চরম ভুল ধারণা আর over-confidence এর কারণেই ক্লাস ১১-এ উঠে second language হিসেবে শেষে বাংলা-ই নিলাম। স্বেচ্ছায়। ভেবেছিলাম- মা তো আছে, দরকার পড়লে না হয় কোনো একটা টিউশন এ ভর্তি হয়ে যাবো। আর সেখানেই হলো গন্ডগোল। প্রতি রবিবার, ১০ টা থেকে দুপুর ১টা। এই ছিল টিউশন এর সময়। শুরুর দিকে যদিও বেশ মন দিয়েই পড়াশুনা করতাম। তারপরে একদিন, চিৎপটাং হয়ে পরলাম। প্রেমে। ওহ সে কি প্রেম, কি প্রেম! টিচার এর চোখ লুকিয়ে টেরিয়ে টেরিয়ে দেখা থেকে শুরু করে, বাস-স্টপ এ অন্তহীন অপেক্ষা, ছুটির পর তার পেছন পেছন হাঁটা, ক্লাস এ সেজে গুজে আসা, অন্য কোনো মেয়ে তার পাশে গিয়ে বসলে মনে মনে খুব গালমন্দ করা- বাদ দি নি কিছুই। শুধু বাদ পরে গেছিল দুটো জিনিষ। তার সাথে কোনদিন মুখ ফুটে কথা বলা টা। আর যে কারণে টিউশন পড়তে ঢোকা, সেটা। প্রথম বোকামি টার কোনো প্রমাণ নেই। দ্বিতীয় টার আছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মার্ক-শীট। বাংলা-য় ২০০ তে ১০১! এবং তার সাথে সাথে টোটাল-মার্কস এর একলাফে ২০ গুন কমে আসা। মা-র "লজ্জায় মরে যাওয়া" মুখ দেখে সেদিন ঠিক করে নিয়েছিলাম, অনেক হলো নিজের যোগ্যতা কে overestimate করা। আর না। তার সাথে এটাও যে পড়াশুনার জায়গায় প্রেম করা এই শেষ। এক্ষেত্রে কিন্তু প্রথম টা মেনে এসেছি অক্ষরে অক্ষরে। এমন কি, পরবর্তী কালে প্রেমিক দের দেওয়া love-letter এর ভাষা-ও কোনদিন "SMS-বাংলা"র ওপর ওঠেনি বানান ভুল হওয়ার ভয়ে। আর দ্বিতীয় টা? থাক সে সব কথা! ;)
যাই হোক, তা আজ হঠাৎ ব্লগার এর language-options দেখতে গিয়ে "অ" চোখে পরলো। বুঝলাম, বাংলা তেও ব্লগ-পোস্ট লেখা সম্ভব তাহলে। আর সেখান থেকেই এই juvenile পোস্ট এর সূত্রপাত। বাংলা ভাষা নিয়ে অত্যাধিক উত্তেজনা কোনদিন-ই ছিল না আমার। তাছাড়া, ইন্টারনেট এর সাহায্যে ইংরেজি তে টাইপ করে বাংলা-য় লেখা আর পরীক্ষার আগে রাত-রাত জেগে ব্যাকরণ মুখস্ত করা অনেক আলাদা। তবে, এতদিন পর বাংলা লিখতে বসে অদ্ভূত এক ভালো লাগা অনুভব করলাম আজ। প্রতি বার, বার বার, "Pretty Woman" দেখে মনে হয় যেমন। Nutella-র শিশি তে সামান্য এক ফোঁটা চকলেট লেগে থাকলে যেমন। বা Paris ঘুরতে গিয়ে রেস্তোরার কাঁচে হাজার খানেক ভাষায় লেখা "welcome" এর মধ্যে "ভিতরে আসুন" খুঁজে পাওয়া যেমন।
বাংলায় কি বলে জানিনা। ইংরেজি তে একেই বলে হয়তো, soothing :)